বগুড়ার পল্লীতে ব্যতিক্রমি পদার্থ বিজ্ঞান মেলা

 

স্টাফ রিপোর্টার: মুখস্ত না করে ডিভাইসের মাধ্যমে হাতেকলমে কিভাবে রসকসবিহিন পদার্থ বিজ্ঞান সহজেই শেখা যাবে তা জানতেই বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দাড়িদহ হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুদিনব্যাপি পদার্থ বিজ্ঞান মেলা। বিজ্ঞান মেলা দেখা গেলেও পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে মেলার আয়োজন তেমন চোখে পড়ে না। বগুড়ার শিবগঞ্জে ৩য় বারের মতো পদার্থ বিজ্ঞান মেলায় এসে অভিভুত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ স্থানীয়রা।

বিজ্ঞান চর্চা আর শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শিক্ষা দিতেই এমন মেলার আয়োজন যা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে সহযোগিতা চাইলেন আয়োজক।

সরোজমিনে দেখা গেছে, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দাড়িদহ হাইস্কুল মাঠে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ২২ টি স্টল বসেছে মেলায়। দুইদিনব্যাপি এ মেলায় পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলোর ব্যবহারিক প্রয়োগ বিষয়ে ডিভাইস প্রদর্শন করা হয়েছে। স্কুলে ১৫ থেকে ২০টি ডিভাইস থাকলেও মেলার স্টলে রয়েছে ৫ শতাধিক ডিভাইস। যা থেকে সলিনয়েড. আবেশ ক্রিয়া, শক্তির নিত্যতা যাচাই, রোধের সুত্রের সত্যতা যাচাইসহ পদার্থ বিজ্ঞানের বিভিন্ন সুত্র হাতেকলমে শিখছে শিক্ষার্থীরা।

রসকসবিহিন এই বিষয়ে আগ্রহ বাড়ছে তেমনি শিক্ষার্থীরা নিজেরাই বিভিন্ন প্রজেক্ট উপস্থাপন করছেন। মুখস্ত না করে ডিভাইসের মাধ্যমে পদার্থ বিজ্ঞান শিখে শিক্ষার্থীরা যেমন উপকৃত তেমনি শিক্ষকরাও আসছেন এ মেলায়। শিক্ষার্থীরা জানান, পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে তাদের মাঝে ভীতি ছিল, সুত্রগুলো তারা মুখস্থ করতো না বুঝেই।

মেলার মাধ্যমে তারা সহজেই হাতেকলমে শিখছেন যাতে করে তারা উপকৃত হচ্ছে তেমনি বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। শুধু শিক্ষার্থীরা নয় আশেপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও এসেছে মেলায়। তারা জানান, প্রয়োগিক বিষয়ে এমন উপস্থাপন তারা আগে এতা বিস্তারিত দেখেনি। মেলায় এসে তারা সহজেই পদার্থ বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে আরো জানতে পারছেন।

মেলায় অতিথি হিসেবে এসে অভিভুত চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ রাশেদ নিজাম। তিনি জানান, বিজ্ঞান মেলা দেখলেও পদার্থ বিজ্ঞান মেলা এবারই প্রথম দেখলেন। এখানে এসে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান সম্পর্কে জানার আগ্রহ ও এই মেলা দেখে তিনি অভিভূত। এমন আয়োজন সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার আহবান জানান তিনি।

মেলার আয়োজক ইজি ইনডাকশন ল্যাব, বগুড়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ফরিদুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শেখার আগ্রহর জন্য মেলার আয়োজন অব্যহত রাখাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে সবার সহযোগিতার প্রয়োজন। তিনি জানান, এইচএসসি পাশ করলেও তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। কিশোর বয়স থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তার। স্কুলে বিজ্ঞান বইয়ে ডিভাইসের ছবি ও ব্যাখ্যা থাকলেও বাস্তবে দেখতে পারেন নি, ছবিগুলোর বাস্তব প্রয়োগ দেখতে ও অন্যদের শেখাতেই পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন ফরিদুল ইসলাম।

বিজ্ঞান চর্চা আর এলাকার শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শিক্ষা দিতেই নিজস্ব অর্থায়নেই ২০০০ সালে নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলছেন ইজি ইনডাকশন ল্যাব। শুরুতে মাত্র ৩/৪ জন শিক্ষার্থী থাকলেও এখন তার ল্যাবে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী। প্রতি শুক্রবার ও শনিবার পদার্থ বিজ্ঞান শিখতে এলাকা ছাড়াও আশেপাশের উপজেলা থেকে শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরাও আসেন তার ল্যাবে।

শুরুতে ডিভাইস সংখ্যা কম থাকলেও এখন ৪০ লাখ টাকার বেশি সরঞ্জাম রয়েছে তার ল্যাবে। বিজ্ঞানপ্রেমি ফরিদুলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয়সহ স্ত্রীর গহণা ও কিছু জমি বিক্রির টাকায় ব্যয় করেছেন ল্যাবের সরঞ্জাম ক্রয় করতে। স্কুলে পড়তে যা শিখতে পারেননি তাই হাতে কলমে অষ্টম থেকে দশম ও একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বিনামুল্যে শেখাচ্ছেন তিনি।

মুখস্ত না করে ডিভাইসের মাধ্যমে পদার্থ বিজ্ঞান শিখে শিক্ষার্থীরা যেমন উপকৃত তেমনি শিক্ষকরাও আসেন এই ল্যাবে। গত তিনবছর ধরে পদার্থ বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করছেন তিনি, সকলের সহযোগিতায় এ মেলা ছড়িয়ে দিতে চান সারাদেশে।