ডেস্ক রিপোর্ট: জুলাই-আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতরা আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাবেন । আহত রোগীদের তালিকা করে প্রত্যেক রোগীকে একটি ইউনিক আইডি কার্ড দেওয়া হবে। সেই কার্ড দেখিয়ে তারা দেশের সরকারি হাসপাতাল থেকে আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের সঙ্গে সরকারের ছয়জন উপদেষ্টার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ বৈঠক শুরু হয়।
বৈঠক শেষে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আহতদের ইউনিক আইডি কার্ড দেওয়া হবে। সব সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তারা সারাজীবন বিনামূল্যে সেবা পাবেন। এমনকি যে সকল বেসরকারি হাসপাতালের সাথে সরকারের চুক্তি হবে সেখানে তারা বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন এবং চিকিৎসা ব্যয়ভার আংশিক সরকার বহন করবে। আহতদের চিকিৎসায় সব সরকারি হাসপাতালে বেড ডেডিকেটেড থাকবে। ঢাকার সব হাসপাতালকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে।’
সায়েদুর রহমান জানান, আজকে আমরা নিশ্চিত করতে চাই এই গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন তাদের স্বল্পমেয়াদি দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন ও চিকিৎসা সেবার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন, এবং বিভিন্ন অংশীদারদের নিয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে আমৃত্যু এই গণঅভ্যুত্থানে আহত সহযোদ্ধাদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং কর্মসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
যারা আহত হয়েছেন তাদেরকে বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসতে হবে জানিয়ে সায়েদুর রহমান বলেন, এজন্য পঙ্গু হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতালসহ ঢাকার বিশেষায়িত সবগুলো হাসপাতালকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরকারি হাসপাতাল এমনকি বেসরকারি হাসপাতালে যে সকল বিশেষায়িত সেবা আছে সেগুলাকে অন্তর্ভুক্ত করে আহত যোদ্ধাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, যদি কোন চিকিৎসা দেশে না থাকে এবং বিজ্ঞান সম্মতভাবে চিকিৎসক বোর্ড দ্বারা সুপারিশ করা হয় তাদেরকে বিদেশের যেখানে চিকিৎসাটা আছে সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। আমরা আশা করি আগামী ডিসেম্বরের ভেতর এগুলো সব দৃশ্যমান হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বৈঠকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা বিশেষ একটি পরিস্থিতিতে মিলিত হয়েছি এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য নানামুখী প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা সম্পন্ন একজন বিশেষ সহকারী নিযুক্ত করা হয়েছে। আন্দোলনে আহত অনেকেই হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে আছেন।
তাদের ভেতর ট্রমা এবং নানা কারণে বিভিন্ন রকম অনাস্থা তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রের অনেকগুলো সমস্যা আমাদের একসাথে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা বারবার এটা নিশ্চিত করতে চাই আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি । এই উদ্যোগগুলো আমাদের আগে থেকেই ছিল এবং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনাগুলো দ্রুতই বাস্তবায়ন করতে চাই এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো দ্রুত দৃশ্যমান একটা পর্যায়ে নিয়ে আসতে চাই।
বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতদের একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন।