আব্দুল মোবিন জিন্নাহ: সাংস্কৃতিক অঙ্গণে এক অনন্য নাম আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী। বাংলার লোকজ সংস্কৃতি ধারণ এবং সুষ্ঠু বিকাশই আমাদের ব্রতঃ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ১৯৮৮ খ্রীঃ ১১ নভেম্বর এক গোধূলী লগ্নে স্বচ্ছ মনোভাবাপন্ন বেশ কিছু তরুণ-তরুণীর উদ্যোগে আব্দুস সামাদ পলাশ-এর প্রস্তাবে সকলের সমর্থনে আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী নামকরণ হয়েছিল এবং পরবর্তীতে মনোগ্রাম রূপকার করেন শিল্পী আমিনুল ইসলাম। ১৯৮৮ খ্রীঃ ১১ নভেম্বর বগুড়াস্থ উডবার্ণ পাবলিক লাইব্রেরী মঞ্চে আব্দুস সামাদ পলাশ-এর দর্শনীয় বিনিময়ে একক নৃত্যসন্ধ্যার মধ্যে দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে।
সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নৃত্য, অভিনয়, সঙ্গীত, আবৃত্তি নিয়ে যাত্রা শুরু হয়, যা অক্লান্ত পরিশ্রমে শত বাধা বিপত্তিকে তুচ্ছ মনে করে বিভিন্ন ঘাত অনেক বন্দুর পথ পেরিয়ে বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে আমাদের ব্যাপ্তী ছড়িয়েছে। দিক নির্দেশক হিসেবে গড়ে উঠার অঙ্গীকার নিয়ে বল দর্পিত পায়ে এগিয়ে চলছে।
আমরা অতিক্রম করেছি ৩৬ বছর, এই ৩৬ বছরে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরবার চেষ্টা করছি। আমরা নিয়মিত ভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস, বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী পালন এবং বগুড়া’র সু-সাহিত্যিক রোমেনা আফাজ ও আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নৃত্যগুরু আব্দুস সামাদ পলাশ-এর জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী পালন সহ স্মৃতি পদক প্রদান করে আসছি।
এছাড়া শহীদ প্রফেসর মোহসীন আলী দেওয়ান, মরহুম সৈয়দ তাইফুল ইসলাম তোফা স্মৃতি পদক প্রদান করেছি। আন্তর্জাতিক নৃত্যদিবস, শিশু নাট্যদিবস পালন সহ জাতীয় ভাবে নৃত্য এবং নাট্যউৎসব-এর আয়োজন করে থাকি। আমরা ইতিমধ্যে চীন, জাপান, দুবাই, ভারত (দিল্লী, মুম্বাই, কলকাতা), শ্রীলংকা, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কাতার দেশের বাহিরে একাধিক সরকারি এবং বেসরকারি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি। গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে শীতার্ত, দুস্থ ও বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, বৃক্ষ রোপণ, মাদককে না বলুল, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী পালন করি।
আমরা প্রতিটি বিষয়ে ঢাকা এবং দেশের বাহির থেকে প্রশিক্ষক এনে নিজেদের উদ্যোগে উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী ২০১৭ থেকে নৃত্যকলায় ৪ বছরের সার্টিফিকেট কোর্স শুরু করেছে। আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী ইতিপূর্বে সফলতার সহিত একাধিকবার মঞ্চায়ন করেছে ১২টি নৃত্যনাট্য যেমন-নাগপূর্ণীমা, লাইলী মজনু, নানা বর্ণে বাংলাদেশ, নৃত্যালেক্ষ্য ৭১’র কথা, পঞ্চকন্যা, চন্ডালিকা, ইছামতির বাঁকে, মহুয়া, বারামখানা, চিত্রাঙ্গদা, আমি জন্মেছি বাংলা ও আমার বাংলা উল্লেখযোগ্য। আর এসব নৃত্যনাট্য বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), চ্যানেল আই, এটিএন বাংলায় একাধিক প্রচার হয় এবং ১২টি নাটক যেমন-সাজাহান, আমাদের সন্তানেরা, তোমরাই, ক্রস রোডে ক্রস ফায়ার, বিবিসাব, এ পিরিতি সে পিরিতি নয়, পরিত্রাণ, কালো দৈত্য, এক বছরের রাজা, বাঞ্চা পূরণ বটিকা, পৌণপুনিক, মানবিক নাটক একাধিক মঞ্চায়ন হয়। এছাড়া টিভি নাটক ‘চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়’ এটিএন বাংলায় প্রচার হয়।
“আসুন বাংলা শিখি শুদ্ধভাবে, বাংলা বলি আত্মবিশ্বাসে” এই স্লোগান নিয়ে নৃত্য এবং নাটকের পাশাপাশি শুদ্ধ উচ্চারণ সুললিত ও সাবলিল বাচনভঙ্গি, শ্রুতিমধুর প্রকাশের মাধ্যমে কবিতা আবৃত্তি শেখানো হয়। আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী সমাজের অনগ্রসর জাতি গোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের লক্ষে “ঋদ্ধসৃজন” নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছে। এটি করেছি আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে। গরীব অসহায় ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে মানুষের মত মানুষ হোক এবং একজন ভালো শিল্পী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা পাক এটাই আমাদের মূল লক্ষ। আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী’র ছাত্র-ছাত্রীদের শিখিয়েছে মাদককে না বলুন, বাল্য বিবাহ বন্ধ করি, ইভটিজিং থেকে দূরে থাকি। পাশাপাশি ভাল মানুষ হিসেবে এদেশের উন্নয়নে ঝাপিয়ে পড়ার। আজকে, আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী’র যে সাফল্য এই সাফল্য একার নয়।
এই সাফল্য আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী’র অভিভাবক, কলাকুশলী সহ বগুড়াবাসীর। তাই আজকে দিনে অঙ্গীকার হোক, এই সাফল্য থেকে যেন পিছিয়ে না পরি। এই সাফল্যের স্রোত যে ভাবে ভাসছে, এভাবেই যেন ভাসতে পারে। তথা বগুড়াসহ দেশবাসীর কাছে এটাই আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী’র প্রত্যাশা।
সংগঠন ইতিমধ্যে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্তৃক সম্মাননা গ্রহন করেছে। আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী’র সাফ্যল্যের সিড়িঁতে অনেকেই হাটছে। তাঁরা দেশে-বিদেশে সুনামের সহিত কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ এবং পিপলস্ থিয়েটার এসোসিয়েশন ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়া’র অন্তর্ভূক্ত।
ধন্যবাদ ও কতৃজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি প্রিয় বগুড়াবাসীকে, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পৌর প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ভাই এবং সকল পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ দেশে বিদেশে ছড়িয়ে থাকা অগণিত ভক্তদের কাছে।
হাঁটি হাঁটি পা পা করে ৩৬ বছরের যাত্রা পথে সকল ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে আগামী পথ চলায় পূর্বের ন্যায় দোয়া ও আশির্বাদ এবং সার্বিক সহযোগিতা করবেন আশা করছি। যা আমাদের চলার পথকে আরো সুগম করবে। আজকের এই দিনে শ্রদ্ধাভরে স্মরন করছি আমরা ক’জন শিল্পী গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নৃত্যগুরু মরহুম আব্দুস সামাদ পলাশ সহ প্রতিষ্ঠানের যেসকল সদস্য না ফেরার দেশে চলে গেছেন তাদের বিধায়ী আত্মার শান্তি কামনা করে সবার সু-স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
লেখক- সভাপতি
আমরা ক’জন শিল্পীগোষ্ঠী ০১৭১৬৮৮০৪৭৮